উচ্চরক্ত চাপের রোগীদের খাবার ও যত্ন
Table of Contents
উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা কি খাবেন আর কি খাবেন না। উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় এসব নিয়ে আমাদের অনেক চিন্তা থাকে। হাই ব্লাড প্রেশার কিভাবে কমানো যায়। হাই ব্লাড প্রেশার কমানোর ঘরোয়া উপায় সহ আর অনেক প্রশ্ন আমরা করে থাকি অনেক সময়।
তবে আমরা ইচ্ছে করলেই আমাদের কিছু কাজ আমাদের শারীরিক সুস্থতার অনেক বড় একটা কারণ হতে পারে। আমি আজকে আর্টিকেলটিতে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের খাবার ও যত্ন নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
এসব কিছু জানার আগে আমাদের জানা দরকার আসলে উচ্চরক্ত চাপ কিভাবে বোঝা যাবে বা কিভাবে বুঝবো আমার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে।
সাধারণত বেশিভাগ উচ্চ রক্তচাপযুক্ত রোগের কোন লক্ষণ দেখা যায় না। আর রোগী নিজেও অনেক সময় জানে না তার উচ্চরক্ত চাপের সমস্যা আছে। এটা এমন একটা রোগ যা হঠাৎ হঠাৎ মানে যখন সমস্যা হবে তখনই কেবল বোঝা যায়। তাই এই রোগের ব্যপারে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে।
অনেক সময় ভালো থাকতে থাকতেই মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব হওয়া বা বমি হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা সহ আরও কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। হঠাৎ মাথা ঘোরা আর রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাওয়া এমন যদি আপনার বেশ কয়েকবার হয়ে থাকে তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ভুল করবেন না। কারণ উচ্চরক্ত চাপের সঠিক ঔষধ না পড়লে অনেক সময় সমস্যা হতে পারে আরও বেশি।
অনেক সময় আমরা বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব হলে সেটা বাসায় বসে রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে গেলে ভুলে যায় তবে বারবার এমন হলে অবশ্যই বুঝবেন আপনার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে।
হঠাৎ হঠাৎ মাথা ঘোরা ও নিয়মিত ঘুম না হওয়া উচ্চরক্ত চাপের লক্ষণ। কিছু খাবার যেমন, কফি খাওয়ার পর ঘুম না হওয়া বা প্রেশার বেড়ে যাওয়াটাও উচ্চরক্ত চাপের লক্ষণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
আর এসব লক্ষণগুলো নিয়মিত হতে থাকলে আপনি বুঝবেন আপনার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে। আর এমন সমস্যা থাকলে নিজে নিজে চিকিৎসা না নিয়ে দ্রুতই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। কারণ উচ্চরক্ত চাপের রোগীদের সমস্যা বেশি হলে স্টোক করার প্রবণতা বেশি থাকে।
প্রথমেই জানবো সেই সব খাবারের নাম যা আপনি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে কখনই খাবে না।
লবণ খাওয়া কমানো
উচ্চরক্ত চাপের অন্যতম কারণ হলো দেহে অতিরিক্ত সোডিয়াম জমা হওয়া। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপের উপরের লক্ষণগুলো আছে তারা লবণ খাওয়া কমিয়ে ফেলবেন। কারণ সোডিয়াম বেশি হলে গেলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাটা আরও বেশি হতে পারে।
আর এর কারণে সেরিব্রেরাল সমস্যা, হৃদরোগ ও স্টোক হতে পারে। লবণ খাওয়া কমানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবারগুলোও খাওয়া কমিয়ে ফেলতে হবে বা খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
আমরা যে লবণ খেয়ে থাকি এতে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে এর পরিবর্তে আপনি সি সল্ট খেতে পারেন এতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকে।
কফি খাওয়া বাদ দেওয়া
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের কফি খাওয়া বাদ দেওয়া উচিত। বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের কফি খাওয়া উচিত নয়। কফি খেলে সাময়িক সময়ের জন্য রক্তচাপ বেড়ে যায়। কারণ কফিতে যেই ক্যাফেইন পাওয়া যায় তা রক্ত নালীকে সরু করে দেয়।
যার ফলে হঠাৎ যেই রক্তচাপ বেড়ে যায় তাতে স্টোক হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ বোঝা গেলে বা সমস্যা থাকলে কফি বা চা পানের অভ্যাস বাদ দিতে হবে। তবে গ্রিন ট্রি খাওয়া যেতে পারে। কারণ এতে অন্টিঅক্সিজেন থাকে। যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
আচার বা সস জাতীয় খাবার বাদ দেওয়া
আমাদের দেশের আচারগুলো প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম লবন দেওয়া হয়। আবার সস বানানোর কাজেও প্রচুর খাবার লবন বা সোডিয়াম লবন ব্যবহার করা হয়।
তাই আপনি যদি দেখেন আপনার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বা লক্ষণ আছে তাহলে এখন থেকেই আচার বা সস জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিন।
এতে চিনির পরিমাণটাও অনেক বেশি থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।
এছাড়াও আপনি যে কোন ফাস্টফুড খাওয়া পরিহার করতে পারেন। কারণ ফাস্টফুডেও অনেক সোডিয়াম থাকে বা যেই সকল উপাদান থাকে তা আপনার রক্তচাপ বাড়ানোর জন্য অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রক্রিয়াজাত বা প্যাকেটজাত খাবার
প্রক্রিয়া ও প্যাকেটজাত খাবারে অনেক সময় দীর্ঘদিন রাখার জন্য লবণের ও চিনিজাতীয় উপাদানটা বেশি থাকে।
তাই এই ধরনের প্রক্রিয়াজাত করা খাবার যেগুলো অনেক দিন রেখে খাওয়া যায় সেগুলো খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিন। এই ধরনের খাবারগুলো রক্ত চাপ বাড়িয়ে দিতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। তাই সুস্থ থাকতে হলে বাড়িতে কম লবণ দিয়ে তৈরি করা খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
অ্যালকোহল ও Soft Drinks
অ্যালকোহল ও Soft Drinks খাওয়া বা পান করা একদম বাদ দিতে হবে। কারণ অ্যালকোহল ও Soft Drinks এ প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি আছে। যা আপনার ওজন বাড়িয়ে তোলে।
এই ধরনের খাবারের পরিবর্তে আপনি তাজা ফলের রস করে খেতে পারেন বা ডাবের পানি খেতে পারেন। যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
লাল গোস্ত খাওয়া বাদ দিতে হবে
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে আপনাকে লাল গোস্ত খাওয়া বাদ দিতে হবে। গরু, ছাগল ও মহিষের গোস্ত গুরো সাধারণত লাল গোস্ত হিসেবে পরিচিত। কারণ এই সব লাল গোস্তে কলেস্টেরল এর পরিমাণ বেশি থাকে। ফরে হৃদরোগের ঝুকি কযেকগুরো বেড়ে যায়।
পাউরুটি খাওয়া বাদ দিতে হবে
অনেক সময় আমরা সকালের নাস্তা হিসেবে পাউরুটি খেয়ে থাকি। আর ডাক্তাররা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের পাউরুটি খেতে একদম নিশেধ করেন। কারণ এতে চিনি ও লবন এর পরিমাণ বেশি থাকে।
সামায়িকভাবে আমাদের এই খাবার ভালো মনে হলেও ডাক্তাররা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের এই খাবার খেতে নিশেধ করে থাকেন।
আর চিনি জাতীয় যে কোন খাবার খাওয়া বাদ দিতে হবে কারণ এই চিনি আমাদরে দেহের ওজন বৃদ্ধি করে ফলে উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়। যদি আপনার মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করে তবে আপনি মধু ও খাঁটি খেজুরের গুড় থেকে পারেন।
সুপ জাতীয় খাবার
আমরা অনেকেই ক্যান বন্দি সুপ থেকে পছন্দ করি যা উচ্চরক্ত চাপের রোগীদের জন্য অনেক খারাপ বা ক্ষতিকর। কারণ ক্যান বন্দি সুপে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে। আর সোডিয়ামের পরিমানের পাশাপামি এতে প্রিজারভেটিভ এর পরিমাণ বেশি থাকে।
এজন ক্যান বন্দি সুপ খেলে আমাদের শরীরের তো ভালো হয়ই না বরং ক্ষতি ও প্রেসার বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। তবে বাসায় বানানো স্বাস্থ্যসম্মত সুপ খেতে পারেন।
এবার আমরা জানার চেষ্টা করবো সেই সব খাবারের নাম যা রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
এই সমস্ত খাবার যদি আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন তাহলে আপনার রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাকা আপনার জন্য অনেক সহজ হবে।
মেথি ভেজানো পানি
অনেকেই একে আমরা মেথি জল বলে থাকি। মসলা জাতীয় এই খাবারটি অনেক উপকারী উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। আগের দিন রাতে এককাপ পানিতে দুই চামচ মেথি ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে মেথি ছেকে নিয়ে পানিটা পান করুন।
মেথির পানি আপনার বিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করে এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে আপনি যদি এই পানি খেতে পারেন তবে আপনার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকার পাশাপাশি আরও অনেক উপকার হবে।
টক দই
টক দুই রক্তের ক্ষতিকর করেস্টরল LDL বা এলডিএল এর পরিমাণ কমাতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। যারা দুধ খেতে পারেন না তারা দুপুরে এই টক দই খাবার শেষে খেতে পারেন।
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের তাই নিয়মিত টক দই খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে এই টক দইয়ের সাথে লবণ বা চিনি মিশিয়ে একদম খাবেন না।
আপেল সিডার ভিনেগার
সব ধরনের ভিনেগারের মধ্যে আপেল সিডার ভিনেগার অন্যতম। পটাসিয়াম যুক্ত ভিনেগার শরীর থেকে টক্সিন উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে ও ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
এছাড়াও আপেল সিডার ভিনেগার উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে। ৫% এসিডিটি দেখে কিনবেন যখন আপেল সিডার ভিনেগার কিনবেন। আর এটি আপনি সকালে পান করতে পারেন নিয়মিত।
ক্যাপসিক্যাম
ভিটামিন সি এর উৎস হিসেবে পরিচিত এই ক্যাপসিক্যাম। যাতে অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক বেশি এন্টিঅক্সিজেন থাকে।
ভিটামিন সি একজন উচ্চরক্ত চাপের রোগীর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে থাকে। তাই আপনি নিয়মিত ক্যাপসিক্যাম খেতে পারেন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ক্যাপসিক্যাম বা টক জাতীয় ফল রাখতে পারেন।
গাজর
গাজরে প্রচুর পরিমাণে বিটাক্যারোটিন ও ফাইবার থাকায় তা রক্ত পরিষ্কার করতে এবং রক্তের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই খাবারটি রাখুন তাহরে সহজেই আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
কাচা রসুন
রসুনে যে সালফার রয়েছে তা রক্তবাহী নালীতে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন করে। ফলে তাদের স্থিতিস্থাপকতা বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে। রসুনে থাকা এলিসিন যৌগ যা উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে থাকে।
সকালে খালি পেটে চিবিয়ে খেতে পারেন বড় কোয়া হলে একটা আর ছোট হরে দুই থেকে তিনটি করে নিয়মিত খেতে পারেন। তাহলে দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
পালংশাক
পালংশাক উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণের রাখতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, বিটাক্যারোটিন ও ভিটামিন সি।
ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেট উচ্চরক্ত চাপ কমাতে সাহায্য করে। তবে সত্যিকারের ডার্ক চকলেট বেছে নিয়ে খাওয়াটা একটু কঠিন। যেসব চকলেটে অতিরিক্ত চিনি থাকে তা কিন্তু আবার ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে।
আমি উপরের আর্টিকেলটির মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের কিছু খাবর খেতে আর কিছু খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এই খাবারের নিয়মগুলো আপনি নিয়মিত মেনে চলতে পারলে আপনার উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশা করা যায়।
One Comment on “উচ্চরক্ত চাপের রোগীদের খাবার ও যত্ন”