তথ্য নির্ভর পৃথিবীতে আমরা আস্তে আস্তে তথ্যের কাছে হার মানতে বাধ্য হচ্ছি। একটা সময় মানুষের গোপন বিষয়গুলো নিজের কাছেই সীমাবদ্ধ থাকতো কিন্তু বর্তমানে তা আর নিজের কাছে থাকছে না। নিজেদের গোপন বিষয়গুলো আমরা নিজেদের অজান্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ আরও নানা রকম মাধ্যমে শেয়ার করছি যার ফলাফল স্বরূপ আমরা নিজেদেরকে একটা জালের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্যের ভূমিকা অপরিসীম।
আসলে আমাদের নিজেদেরকে সচেতন হতে হবে এইসব বিষয়গুলো নিয়ে। সামাজিক পরিবেশ মানেই যে শুধু ফেইসবুক নয় বিষয়টা আমাদের নিজেদেরকে জানতে ও বুঝতে হবে। আর এই বিষয়টার জন্য আমাদের নিজেদেরকেই চেষ্টা করতে হবে। আজকের আর্টিকেলে আমি আমাদের ডেটাগুলো ও পৃথিবীর অন্যতম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের কিছুু তথ্য শেয়ার করবো যা আমাদেরকে হয়তো ধারণা দিবে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য শেয়ার করার বিষয়ে।
আসুন জেনে নেই পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসুবক সম্পর্কে।
বর্তমান পৃথিবীর বলা যায় অর্ধেক সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম সাইটগুলোই ফেইসবুকের দখলে। যেমন, ওয়ার্টসএ্যাপস, ইনস্ট্রাগ্রামসহ আরও কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন ফেইসুবকের দখলে। ফেইসবুক এত বড় একটা কম্পানি যা কিনা পৃথিবীর মানুষের এত এত তথ্য নিজে কাজ করে সেটাও আবার ফ্রিতে। ফ্রিতে এমন সেবা দেওয়ার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা নেই বললেই চলে তারপরেও ফেইসবুক বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করছে এই ফ্রি সার্ভিস এর মাধ্যমেই। তাদের বিজনেস পলিসিটিটা অনেক বেশি স্মার্ট যেটা জানতে পারলে আপনিও অবাক হবে। আসুন সামান্য একটু ধারণা দেওয়া যাক ফেইসুবকের বিজনেস সিস্টেম নিয়ে।
তথ্য নিয়ে বিজনেস
ফেইসবুক বর্তমানে তথ্য নিয়ে বিজনেস করে থাকে। কিছুদিন আগেও ফেইসবুক অ্যাড থেকে বিজনেস করতো। যেমন, আপনি কোন কম্পানির অ্যাড বা কোন কম্পানির কোন প্রডাক্ট এর অ্যাড দেখাবেন তার জন্য ফেইসবুককে টাকা দিতে হবে। কিন্তু করোনা কলে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে ফেইসবুক পেজের মাধ্যমে বা গ্রুপের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করাটা। উই গ্রুপ ও নিজের বলার মত গল্প নামক বাংলাদেশের জনপ্রিয় দুইটা গ্রুপ আছে যেখানে দেশের গ্রাম অঞ্চল থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা মেয়েরা ফেইসবুকের মাধ্যমে বিজনেস করে থাকে। আর এই বিজনেস একটা সময় সামান্য কিছু টাকার হলেও বর্তমানে তা কোটি টাকার চাইতেও অনেক বেশিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
আপনি ফেইসবুক ওপেন করার সময় আপনার নাম ও ঠিকানা দিয়ে ফেইসবুক আইডি খোলেন আর এই খোলার সময়কার তথ্যগুলো নিয়েই ফেইসবুক বিভিন্ন কম্পানির প্রচার করার জন্য ডেটা শেয়ার করে থাকে বর্তমানে। ধরুন আপনি ফেইসবুক পেজের মাধ্যমে আপনি বিননেস করবেন আর এর জন্য আপনার কিছু প্রডাক্ট আছে যেটা হলো, মেয়েদের বিউটি প্রডাক্ট। তাহলে আপনি অ্যাড দেবেন ্ফেইসবুকের মাধ্যমে আর এই অ্যাড দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি এলাকা ও বয়স ও মেয়ে ঠিক করে দেবেন তাহলেই আপনার কাজ শেষ। বাকি কাজটা করবে ফেইসবুক কম্পানি। সে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটা নির্দিষ্ট এমাউন্ট দিয়ে আপনার অ্যাডটা টার্গেট কাস্টোমারের কাছে পৌঁছে দেবে। একদিকে আপনি পণ্যও বিক্রি করতে পারলেন আবার অন্যদিকে আপনার পণ্যের পরিচিতও বাড়লো।
বর্তমানে বহুন জনপ্রিয় বিজনেসগুলোর মধ্যে এইটা অন্যতম বিজনেস হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ফেইসবুক মিলিয়ন মিলিয়ন ডাটা রাখে আর সেই ডাটা দিয়ে এভাবেই বিজনেস করে থাকে দিনের পর দিন। বর্তমানে ফেইসবুক শুধু ফেইসবুকের সাথেই সিমাবন্ধ নয় আরও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিনে সে এখন পৃথিবীর টপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়েছে। আর এখানে আপনি হয়তো ফেইসবুকে সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না কিন্তু অন্যগুলোতেও যদি দেন তবে আপনার ডিভাইস থেকে সেই তথ্য নিয়ে আপনাকে আপনার ডিভাইসে ব্যবহৃত ফেইসুবকেও তা দেখাবে। এভাবেই ডেটা নিয়ে ফেইসবুক বর্তমানে বিজনেস করছে। আর এই বিজনেসের ক্ষেত্রটা আরও বেড়েছে করোনার কারণে। আপনি কার সাথে কি ধরনের ম্যাসেজ আদান প্রদান করছেন তা সবই দেখছে ফেইসবুক কম্পানি আর এই তথ্যের উপর ভিত্তি করেই ফেইসবুক বর্তমানে বিজনেস করছে।
বর্তমান সময়ে ফেইসবুক কতটাক শক্তিশালী
এর একটা উদাহারণ দেওয়া যেতে পারে। ফেইসবুক বা আরও সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যদি ইচ্ছা করে তাহলে তারা আপনাকে জনপ্রিয় করে ফেলতে পারে আর যদি তারা ইচ্ছা করে আপনাকে জনপ্রিয়তা থেকে নামাতেও পারে। যেমন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প কিছুদিন আগে নির্বাচনের বিষয়ে কিছু মতামত দেওয়ার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তার আইডি ও পেজকে বাতিল বা বন্ধ করে দেয়। সামাজিক একটা যোগাযোগ মাধ্যম যা একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিকে মূহূত্বেই শেষ করে দিতে পারে। এখন আর ডোনাল্ট ট্রাম্প এর প্রচার দেখা যায় না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আসলে ফেইসবুক বিশেষ কিছু অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে যেখানে তারা তাদের নিজেদের ডাটাকে নিজেদের প্রয়োজন মত ব্যবহার করতে পারে। আর এই প্রয়োজনের জন্য অনেক সময় তারা নিজেদের সুবিধা হয় এমন ব্যক্তিদের কাছে তা প্রচার করে। যদিও আমাদের দেশের তথ্য বাইরের দেশের মানুষের কাছে যাবে না আবার বাইরের দেশের মানুষের তথ্য বা পোস্ট আমাদের দেশে আসবে না।
লোকেশানের উপর নির্ভর করে তথ্য আদান প্রদান করা হয় এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আপরি অ্যাপন ইনস্টল করার সময়টাতেই এই তথ্যটা বা পারমিশানটা তাদেরকে দিয়ে থাকেন নিজের অজান্তেই। আসলে এটাই একটা নিয়ম অ্যাপস ব্যবহার করার আর এই সুবিধার জন্যই তারা বিভিন্ন এ্যালগোরিদম তৈরি করেছে যেটা ব্যবহার করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আপনার তথ্য একটা জায়গা থেকে অন্য জায়গাতে শেয়ার করার মাধ্যমে তাদের নিজেদের বিজনেস তৈরি করছে। বিভিন্ন পেজের বিক্রি দেখলে আপনি হয়তো হবাক হয়ে যাবেন আর এর সাথে কুরিয়ারসহ আরও কিছু ব্যক্তি যুক্ত হয়ে নিজেদের বিজনেসকে আরও বেশি শক্তিশালী করছে। এখানে অবশ্য আমি বলবো উভয় পক্ষেরই Win Win Condition হচ্ছে। ফেইসবুক আপনাকে আপনার টার্গেট কাস্টোমার বেছে দিচ্ছে আর এই জন্য আপনি ফেইসবুককে কিছুে পেমেন্ট করছেন। পেমেন্ট করার মাধ্যমে আপনার পরিচিতি ও বিক্রি বেড়ে আপনিও লাভ করছেন।
অনেক সময় এই নিয়মটা অনেকের কাছেই বিব্রতকর হয়ে যায় কারণ বর্তমানে মানুষ সিকিউরিটি নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। বিশেষ করে ইউরোপের মত দেশগুলো বর্তমানে সিকিউরিটি নিয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। আর তারা নিজেদের সুবিধার কথা চিন্তা করে আস্তে আস্তে ফেইসবুক থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং নিজেদের দেশের জন্য নিজেদের প্রয়োজন মত অ্যাপস বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তৈরি করে ব্যবহার করছে। চীন, তুরস্ক এসব দেশে ফেইসবুকের চাইতে অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেশি জনপ্রিয়। আর তারা নিজেদের দেশের তথ্য যেন অন্য কোন দেশের বা ডেটার যেন অপব্যবহার না হয় সেজন্য কাজ করে যাচ্ছে নিয়মিত। তথ্য নির্ভর পৃথিবীতে মনে করা হচ্ছে ডেটা এক প্রচার সম্পদ যা অনেক বড় সম্পদ হবে সামনে কারণ আমরা ডিজিটাল করার পাশাপাশি আামদের সকল তথ্যই থাকছে এই ডিজিট এর মধ্যে যা আমরা নিজেরাও বুঝতে পারছি না। মেমন, আপনার মোবাইল ব্যংকিং এর ডেটা থেকে শুধু করে আপনার অনলাইন ব্যাংকিং এর পাসওয়ার্ড সহ আরও নানা ডেটা আমরা ডিজিট করেই রাখছি আর এই ডিজিটই একটা বড় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে আগামীর পৃথিবীতে।