করোনা ভাইরাস গত বছর মার্চ মাস থেকে আসলেও পৃথিবীতে এর বিচরণ হয় ২০১৯ সালের শেষের দিকে। তাই তো একে COVID-19 হিসেবে বা কোভিড-১৯ বলা হয়। আমাদের দেশে প্রথম করোনা রোগী ধরা পড়ার পর থেকে আজকে পর্যন্ত সকল তথ্যই সরকারী ওয়েব সাইটে লিপিবদ্ধ করা আছে। আর বিশ্বে বিভিন্ন দেশ এখন করনোর টিকা বা ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে। আমাদের দেশীয় একটা কম্পানি গ্লোব কম্পানিকে সরকার করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করার কাজে অনুমোদন দিলেও এর প্রক্রিয়াটা কবে নাগাদ শেষ হবে তা কেউ জানে না। এদিকে আমাদের দেশের বিভিন্ন খাতে সমস্যা বেড়েই চলেছে। ছোট ছোট স্টার্ট-আপ কম্পানিগুলো ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে আর নতুন কোন উদ্যোক্তাতাও এর মধ্যে কাজ করার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
বেড়েছে দারিদ্রতা, বেকারত্ব ও পারিবারিক সমস্যা। অনেক কম্পানি কর্মী ছাটাই থেকে শুরু করে বেতন কমানোসহ আরও অনেক পদক্ষেপের পরেও সমস্যার কোন সমাধান মিলছে না। সরকারি সহায়তা কিছু প্রতিষ্ঠান পেলেও তা অত্যন্ত নগন্য। করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শিক্ষাখাতটা। বিভিন্ন খাত খুলে দিলেও তাদের বাইরের দেশের কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে অনেক বিদেশী কম্পানি বন্ধ ও তাদের অর্ডার বাতিল হওয়াতে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আত্মরজার্তিক বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থা WHO করোনার প্রথম থেকেই বিভিন্ন সেক্টরের জন্য বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে আসছি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশের স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলেও আমাদের দেশে এখনও অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয় নাই বলে জানানো হয়েছে সরকারি মাধ্যম থেকে। আমাদের মাননিয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ব্রিফিং এ বলেছেন দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে না।
এদিকে নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখার জন্য বেসরকারী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন মোবাইল কম্পানির সাথে কথা বলে তারা কার্যক্রম চালু করেছে। স্বাস্থ্য খাতের অবস্থাটাও খুব বেশি ভালো সেটা বলা কঠিন। আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এত খারাপ অবস্থা যা এই মহামারি না আসলে বোঝা যেতো না। দেশের জনসংখ্যার তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা এতটাই কম যে, এই করোনা মহামারি ঠিকমত পরিচালনা করাটা অনেক বেশি কঠিন। তারপরেও বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা ও সরকারি ব্যবস্থাপনা আমাদের দেশের স্বাস্থ্যখাতকে টিকিয়ে রেখেছে। গত ৮ ই জানুয়ারী ২০২১ ডয়েচে ভেলে বাংলা বিভাবে একটা সংবাদ আলোচনা অনুষ্টিত হয় যেখানে উপস্থিত ছিলেন আমাদের দেশেল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষক এবং উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও বর্তমানে সরকারে করোনা মহামারির বিশেষ দলের একজন সদস্যা। তাদের আলোচনা থেকে বোঝা যায় আমাদের দেশে করোনার টিকা কবে আসবে এ নিয়ে এখনও কোন সঠিক তথ্য জানা যায় নাই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের টিকাগুলো কি বানিজ্যিক হবে নাকি তারা শুধু নিজেদের দেশের জন্যই তৈরি করবে সে বিষয়েও কোন স্পষ্ট ধারণা আসে নাই।
তবে কিছুদিন আগে একটা প্রতিবেদনে বলা হয়েছি ভারত থেকে নেওয়া হবে আমাদের দেশের জন্য টিকা। আর এ নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় আমাদের দেশে চলছে। কারণ ভারতের জনসংখ্যাটা যত বেশি তারা নিজেদের দেশের চাহিদা মেটানোর পর আমাদের দেশে দিতে দিতে কতটা সময় লাগবে সে বিষয়েও কোন ধারনা কারো কাছেই নেই। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত এখনও সেই টিকা তৈরি কোন কার্যক্রম শুরু করে নাই। তারা বাইরের দেশে থেকে কাচামাল নিয়ে আসবে তারপর শুরু করবে বলে জানা গেছে আর তাদের সেই টিকা আমাদের দেশে কবে আসবে সেটা এখনও একটা মরিচিকার মতই দেখাচ্ছে। বিকল্প কোন ব্যবস্থা এখনও করা হয় নাই এই করোনার ভ্যাকসিন ও টিকা নিয়ে। তবে সরকার পক্ষ থেকে থেকে যথেষ্ট সচেতন করার কাজ চলছে।
ভ্যাকসিন বা করোনা ভাইরাসের টিকা আসার আগেই আমাদের বর্তমান স্বাস্থ্য মন্ত্রী বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ব্রিফিং এ বলেন টিকা বা ভ্যাকসিন একটা নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষকে আগে দেওয়া হবে আর ১৮ বছর বয়সের নিচে যারা তাদেরকে টিকা না দিলেও হবে। এসব নানা তথ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে আলোচনা কারণ এখনও যেখানে টিকার কোন সম্ভবনাই নেই সেখানে টিকার বিতরণ কিভাবে হবে সেটা সত্যিই একটা চাপ তৈরি করবে। যদি বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেণ, আমাদের দেশের বড়দের টিকার কোন প্রচলন এর আগে কখনও নেই যেটা আছে সেটা ছোট বাচ্চাদের। তাই আমাদের মনে হয় এসব নিয়েও সরকারের কাজ করা উচিত। বড়দেরকে আগ্রহী করে তোলা ও জনমত তৈরি করা এসব কাজ এখন থেকেই করতে হবে। আর করোনার টিকা বা ভ্যাকসিন না আসার পর্যন্ত সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করা এসব নানা পদক্ষেপই পারে আমাদের দেশে করোনা মহামারির প্রকোপটা কমাতে।
অনেকেই মনে করছেন সর্বসাধারণের জন্য হবে না এই টিকা যদি সেটা বাইরের দেশ থেকে আনা হয় এসব নানা তথ্য নিয়ে চলছে আলোচনা। তবে সব আলোচনার মধ্যে এটা সত্য যে, করোনা মহামারি আমাদের দেশের দারিদ্রতার হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই অবস্থাটা আরও কয়েকমাস চলতে থাকলে সমস্যা কমার থেকে বাড়তেই থাকেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাস্তবের চিত্র আর টিভি মিডিয়ার চিত্রটা একটু আলাদা। আমাদের প্রধান স্বাস্থ্য উপদেষ্ট্রা পদত্যাগ করার পর থেকে অনলাইনে ব্রিফিং দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয় যেটা আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতাটাকে কমিয়ে দিয়েছে। এখন কেউ আর জানে না প্রতিদিন কি পরিমান মারা যাচ্ছে আর কি পরিমাণ আক্রান্ত হচ্ছে কারণ অনলাইনে শুধু একটা সংখ্যা দেখানো হচ্ছে। আর বিভিন্ন গনমাধ্যমের তথ্যগুলো কতটুকু সঠিক তা বলাই বাহুল্য। রাজনীতি কি করোনার ভ্যাকসিন বা টিকা নিয়েও করা হচ্ছে এসব বিষয়ে জানার জন্য আমাদেরকে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ বিগত দিনের অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায় যে, আমরা যেই ভারতের উপর নির্ভর করে করোনার টিকা বা ভ্যাকসিন নিবো বলে আশা করে বসে আছি তারা হয়তো দিতে পারবে না।
কারণ বিগত কয়েক বছরে আমাদের দেশের দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার পেছনে ভারতের অনেক বড় হাত আছে। চাল রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া, পেয়াজ রপ্তানিসহ আরও কিছু পন্য হঠাৎ করেই বন্ধ করে দেওয়ার কারণে আমাদের দেশের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছিল। যা এখনও চলমান কিছু কিছু পণ্যেল ক্ষেত্রে তাই এই বিশেষ বিষয় মানে করোনার ভাইরাস নিয়ে রাজনীতিটা দেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে না বলেও ধারণা করা হচ্ছে। ভুটার নামক দেশটি করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে নিজেদেরকে পুরো পৃথিবী থেকে আলাদা করে রেখেছিল। তারা গত ২৩ ডিসেম্বর প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যু দেখেছে যদিও আক্রান্ত বেশি নয় তারপরেও সামনের পরিস্থিতি কেমন হবে সেটা নির্ভর করছে কবে নাগাদ আমাদের হাতে আসবে সেই কাংখিত করোনার ভ্যাকসিন বা টিকা।
বর্তমানে আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা কম হওয়ার কারণ পরীক্ষা কম করা ও বিভিন্ন মাধ্যমের সাথে সমন্বয় সাধনে ব্যর্থ হওয়া। আমরা অবশ্যই আশার করবো সামনের দিনগুলোতে এই সমস্যাগুলো থেকে অবশ্যই সরকার যথাযত ব্যবস্থা গ্রহন করে আমাদের দেশেল মানুষকে এই করোনার ভ্যাকসিন নামক রাজনীতি থেকে বের করে নিয়ে আসবে। আপনার নিজের মুল্যবান মন্তব্য থাকলে অবশ্যই আমাদেরকে জানাবেন কমেন্ট এর মাধ্যমে।