করোনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঝুকিতে পড়তে পারে বলে আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। ২০২১ সালের জানুয়ারী মাসের বিশ্বব্যাংকের তথ্যটা যা নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যেই এ নিয়ে আলোচনা চলছে সব মহলেই। করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব পড়বে তার একটা নমুনা বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে আমাদের দেশের অর্থনীতির প্রভাবের কারণে বাড়তে পারে দ্রারিদ্র মানুষের সংখ্যা।
করোনায় ঝুকিতে পড়তে পারে বাংলাদেশে অর্থনীতি ও দেশে দারিদ্রের সংখ্যা বাড়ার ইঙ্গিত গবেষকদের এসব নিয়ে অনেক আগে থেকেই আলোচনা চলছিল। গত মার্চ মাস থেকে চলছে করোনার প্রভাব বাংলাদেশ। আর এই কয় মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেশের বৃহত্তম পোশাক শিল্প অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। বিভিন্ন মিডিয়া ও পত্র পত্রিকাতে অনেক ছোট ছোট পোশাক শিল্প বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের দেশের অর্থনীতিবিদরা বলছে এই ক্ষতির প্রভাবটা সাময়িক হলেও এই সাময়িক সময়ে এসব প্রতিষ্ঠান ধরে রাখাটা অনেক বেশি কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। বিশ্বের অতি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৬ষ্ঠ থাকলেও এই করোনা মহামারিতে তা বাড়তে শুরু করেছে। পুরো পৃথিবী ক্ষতির মুখে পড়লেও আমাদের দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে সাধারণত রেমিটেন্স ও পোশাক শিল্প দিয়ে।
করোনার প্রভাবে দেশের এই দুইটা খাত অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং হচ্ছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। পুরো বিশ্বে করোনা মহামারির কারণে পোশাকে চাহিদা অনেক কম আর বিদেশী বিভিন্ন দেশের কর্মসংস্থানের সুযোগটাও দিনদিন কমছে করোনা মহামারির কারণে। আর এর প্রভাব পড়ছে আমাদের দেশের অর্থনীতিতে। ধারণা করা হচ্ছে এরকম অবস্থা আর কিছুদিন চলতে থাকলে দেশে দারিদ্রের সংখ্যা আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে। রাজধানীর ঢাকার দৃশ্যটা বিগত কয়েক মাস লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে না পেরে গ্রামে চলে গেছে। অনেকেই আবার প্রস্তুতি নিচ্ছে গ্রামে চলে যাওয়ার জন্য। করোনার কারণে ঝুকিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও দেশের বিভিন্ন খাতগুলো।
দেশের অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব অনেকটাই বেশি যা ২০২১ এর শুরুতে এসে বোঝা যাচ্ছে। দেশে শীতকালে করোনার প্রভাবটা বাড়বে আগে থেকে বলা হচ্ছিল আর সেই অনুসারে যথাযত ব্যবস্থা না নেওয়া ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোর প্রভাব বেশি হওয়ার কারণে বিশ্ব বাজারে আমাদের দেশের পণ্যের চাহিদা অনেক কমে গেছে। আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশ আত্মরর্জাতিক বাজার থেকে আয় বন্ধ হলে সমস্যা পড়বে এটাই স্বাভাবিক। অনেকেই বলছেন, আমাদের দেশে করোনার সংক্রামণ এখনও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো অনেক বেশিতে পৌঁছায় নাই তবে কোথায় গিয়ে ঠেকবে আর কতটা ক্ষতি হবে তা কেউ ই বলতে পারছে না এখনও। এদিকে গত মাসে বিশ্বব্যাংক বলেছে, করোনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুই থেকে তিন শতাংশে নেমে যেতে পারে। অথচ অর্থবছরের শুরুতেই ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার।
করোনর এই পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন কর্মসংস্থানের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। নানা অজুহাতে চলছে কর্মী ছাঁটাই করা। হোটেল, রেস্তোরা, দিনমজুরসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত যারা তারা পরেছেন চরম অবস্থায়। এদিকে এখনও দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। দেশের ১৪ লক্ষ মানুষ বেসরকারী কিন্ডাগার্টেন স্কুলগুলোতে কাজ করে। তাদের অবস্থা আগে থেকেই খারাপ এখন তো বলাই বাহুল্য। আর কতদিন বন্ধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তা এখনও নির্ধারিত করা যায় নি। এদিকে অনেক শিক্ষক তারা জড়িযে পড়ছেন বিভিন্ন বিকল্প পেশায়। অনেকেই ধারণা করছেন করোনার মহামারিতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতির প্রভাবটা এখন বেশি একটা বোঝা না গেলেও এর প্রভাবটা বোঝা যাবে পরে।
করোনা ও অর্থনীতি কিভাবে সামলাবে সরকার ? এমন প্রশ্নের উত্তরে বিভিন্ন গবেষক মনে করেন হয়তো আগামী ৩ মাস এর প্রভাবটা থাকবে আর এই সময়টাতে সবারই এগিযে আসতে হবে সামাজিকভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য। বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানি। তবে সামনের পরিস্থিতি নিয়ে কেউ কোন মন্তব্য করতে পারেন নি। কারণ যে কোন সময় ঘটতে পারে চরম ক্ষতি। অর্থননৈতিক প্রবৃদ্ধি কমলে দেশে দারিদ্র হার বাড়বে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। পোশাক কারখানা গুলো খুলে দেওয়া হলেও তাদের কাজ কমে গেছে করেনার কারণে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব বেশি পড়েছে রপ্তানি শিল্পগুলোতে। লকডাউনের কারণে বিশ্বের বড় বড় দেশ যেসব দেশ বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিতো তারা তাদের ব্যবসা ঠিকমতো করতে পারছে না। বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকায় ব্যবসা বাণিজ্য, মানুষের কেনাকাটা অনেকটা কম। এসব দেশেই মূলত আমাদের দেশের পোশাক শিল্পের বেশিরভাগ পণ্য রপ্তানি করা হতো। আগের বছরের থেকে ৮২.৮৫% শতাংশ কম এখন রপ্তানি হচ্ছে যার অর্থমূল্য ৫২ কোটি ডলার। সামনে বাণিজ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী এই আমদানি ও রপ্তানি বানিজ্য ৩২% পর্যন্ত কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য দেশে কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার কোন বিকল্প নেই বর্তমানে। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাটা ভালো করার জন্য অবশ্যই সরকারের দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার পেছনে বিনিয়োগ ও দেশের ক্ষতিগ্রস্থ খাতগুলো বিশেষ সহযোগীতা দিযে আগামী কযেক মাস চালানোর সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার কোন বিকল্প নেই বর্তমানে। করোনা মহামারি হয়তো একটা সময় থাকবে না তবে এর ক্ষতির প্রভাটা থাকবে অনেক সময় ধরে তাই যে কোন পরিকল্পনা করার আগে অবশ্যই তা বিশেষভাবে বিবেচনা করে করতে হবে। যেমন সেই পরিকল্পনাটা সুদুরপ্রসারি হয়।
উপরের আর্টিকেলটিতে আগামীতে দেশের অর্থনীতি কেমন হতে পারে তার প্রতি একটা ধারণা দেওয়া হয়েছে যা বিশ্ব ব্যাংকসহ আরও কিছু মিডিয়ার তথ্য থেকে নেওয়া হয়েছে। আশা করি করোনা মহামারির সময়টাতে সবাই মানবিক হবেন এবং একে অন্যের সহযোগীতায় এগিযে আসবেন সবাই। তবেই আমরা গড়ে তুলতে পারবো সোনার বাংলাদেশ।