পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অন্যতম হলো হোয়াটসঅ্যাপ। পুরো পৃথিবীতে প্রায় ২০০ কোটিরও অধিক মানুষ ব্যবহার করে এই মাধ্যমটি।
আপনারা যারা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করছেন তাদেরকে ২০২১ সালের জানুয়ারীতে একটা বার্তা পাঠিয়েছে। বার্তাটিতে কিছু শর্ত দেওয়া আছে ব্যবহারকারিদের জন্য। হোয়াটসঅ্যাপ কতৃপক্ষ বলছেন যারা এই সব শর্ত মানবেন না বা পূরণ করবেন না তারা আর ফ্রেব্রুয়ারী মাসের ৮ তারিখ থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন না। এসব শর্ত ব্রিটেন ও ইউরোপীয় দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য হবে না। এবার আসুন হোয়াটসঅ্যাপ সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিই।
হোয়াটসঅ্যাপ হলো সেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেখানে কল বা কোন বার্তা আদান-প্রদান করলে হ্যাক করার কোন সুযোগ নেই। অর্থ্যৎ আপনার পাঠানো বার্তা বা কোন কথা গোপন থাকবে।
হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের মনে নতুন একটা চিন্তা দাড়িযেছে যে, নতুন নিয়মটিতে যেসব তথ্য দিতে হবে তাতে কি গোপনীয়তা আর থাকবে ? এসব নানা প্রশ্নের তৈরি হয়েছে ইতোমধ্যেই।
হোয়াটসঅ্যাপ এর মালিক হচ্ছে ফেইসবুক। ফেইসবুক কতৃপক্ষ চাচ্ছে যে, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারীদেরকে কিছু তথ্য শেয়ার করতে হবে। আর এসব তথ্য না করলে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা যাবে না। সেজন্যই ব্যবহারকারদেরকে তথ্য দিতে বাধ্য করছে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। এসব তথ্য নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ কম্পানিটি ব্যবহারকারীদের উপর যে চাপ প্রয়োগ করছে তা নিয়ে সারা বিশ্বে উদ্বেগ তৈরি হযেছে।
কি ধরনের তথ্য দিতে হবে সেটি নিয়ে ব্যবহারীদের নানা রকম তথ্য আছে। যেমন,
(ক) ব্যবহারকারীর নাম।
(খ) ফোন নাম্বার।
(গ) ফোন সেট সংক্রান্ত তথ্য দিতে হবে। যেমন কোন কম্পানির ফোন আর সেটের মডেল কত এসব।
(ঘ) আইপি অ্যাড্রেস ।
(ঙ) আর্থিক লেনদেনের তথ্য যদি থাকে সেটিও আপনাকে দিতে হবে।
নতুন তথ্য বা আপডেট নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ কম্পানিটি কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছেন এর মধ্যেই। তারা বলছেন, নতুন নিয়মকে কেন্দ্র করে বিশ্বে নানা ধরনের গুজব তৈরি হয়েছে। অনেকেই হোয়াটসঅ্যাপ কম্পানির হেল্পলাইনে প্রশ্নও করেছেন। হোয়াটসঅ্যাপ কতৃপক্ষ বলছেন নতুন নিয়ম আসলেও ব্যবহারকারীদের কল করা বা কোন বার্তা এর গোপণীয়তার কোন সমস্যা হবে না। হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে তারা ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত ম্যাসেজ বা কলের কথাগুলোও শুনতে পারেন না।
যারা কল করছে বা যারা কল শুনছেন তাদের কোন রেকোর্ডও রাখা হয় না। এছাড়াও যেসকল গ্রুপ আছে হোয়াটসঅ্যাপ এর সেগুলোও গোপনীয় থাকবে। এমন তথ্যগুলো জানিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ কম্পানিটি। হোয়াটসঅ্যাপ এর ম্যাসেজ মুছে যাওয়ার বিষয়টাও ব্যবহারকারীরা চাইলেও সেভ করে রাখতে পারবে। সেভ করার নির্দিষ্ট সময় পর তা অটোমেটিক মুছে যাবে বলেও জানানো হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ কম্পানির পক্ষ থেকে। এছাড়াও ব্যবহার কারদের লোকেশানও হোয়াটসঅ্যাপ কম্পানি দেখতে পারবে না।
হোয়াটসঅ্যাপ তাহলে কি পরিবর্তন করছে ?
উপরের তথ্যগুলো যদি ঠিকই থাকে তাহলে কি ধরনের পরিবর্তন আসছে এমন ধারণাও অনেকের আছে। আসলে পরিবর্তনগুলো মূলত ফেইসবুক মার্কেটিং বা এসব ব্যবসা ও উদ্যেক্তা ও বানিজ্য সংক্রান্ত হবে। যেমন, আপনি অনেক সময় ফেইসবুক ব্যবহার করার সময় দেখবেন অনেক বিজ্ঞাপন আসে আর সেখানে পণ্য ক্রয় বিক্রয় করার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ এ ম্যাসেজ দিতে পারবেন এসব কিছু পরিবর্তন মূলত করছে হোয়াটসঅ্যাপ কম্পানি। আর এখাবে আপনি কোন কোন পণ্য ক্রয় করতে আগ্রহী সেটি ফেইসবুক কম্পানি জানতে পারবে আর সে অনুসারে আপনার কাছে সেই সকর পণ্যগুলো বিজ্ঞাপন যাবে।
ধরুন আপনি ফেইসবুকে টি শার্ট বা বাইকেল কেনার জন্য বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন বা এ নিয়ে সার্চ করছেন। তখন আপনার কাছে সেই সকল বিজ্ঞাপনগুলো যাবে আর এসব বিষয়গুলোই মূলত পরিবর্তন করছে হোয়াটসঅ্যাপ কম্পানিটি। মূলত এটা ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটা মাধ্যম হিসেবে কাজ করার জন্য আপডেট করছে বলা যেতে পারে।
আমাদের দেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যারা হোয়াটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে কাস্টোমারদের সাথে ব্যবহার কথাবার্তা আদান-প্রদান করে থাকে। এ ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করা হলে ক্রেতাদের আগ্রহ সম্পর্কে জানতে পারবে ফেইসবুক কম্পানি বা হোয়াটসঅ্যাপ কম্পানি যেহেতু দুটো একই কম্পানি তাই তাদের মার্কেটিং করতে সহজ হবে বিধায় তারা এই ধরনের পরিবর্তনগুলো আনছেন বলে জানিয়েছেন।
হোয়াটসঅ্যাপ এর নতুন নিয়ম নিয়ে অনেকেই চিন্তিত আর এর কারণে অনেকেই এটি বাদ দিয়ে ভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করার চিন্তাও করছেন। সেক্ষেত্রে Signal & Telegram অনেক জনপ্রিয় মাধ্যম। হোয়াটসঅ্যাপ নতুন নিয়ম করার পরপরই Signal & Telegram অ্যাপ টি ডাউনলোড করার পরিমান ও এদের গ্রাহকের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
ডেটা বিশ্লেষণ করা প্রতিষ্ঠান বলছে, হোয়াটসঅ্যাপ নতুন নিয়ম করার আগে Signal ডাউনলোড করা চিল ২ লক্ষ ৪৬ হাজার বার কিন্তু এর পরে এক সপ্তাহে এটি বেড়ে দাড়িয়েছে ৮৮ লক্ষে। সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হয়েছে ভারতে সেখানে আগে ছিল ১২ হাজার এখন হয়েছে ২৭ লক্ষ।
যোগাযোগের মধ্যে এই সমযে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হয়েছে টেলিগ্রাম বা Telegram এক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ৪৫ লক্ষবার এটি ডাউনলোড হয়েছে। এই সময়ে ২ মিলিয়ন বা ২০ লক্ষ কমে গেছে হোয়াটসঅ্যাপ ডাউনলোড।
এসব পরিবর্তন আসবে এবং পরিবর্তনের পরেও হোয়াটসঅ্যাপ সহ আরও সকল যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহারকারীরা ব্যবহার করবেন বলেও ধারনা করছেন প্রযুক্তিবিদরা।
আমাদের আজকের আর্টিকেলটি ছিল প্রযুক্তি নিয়ে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মূল্যবান সময় দিয়ে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য।