করোনার পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থা পাঠ – ১

করোনার প্রভাব পড়ে নাই এমন কোন সেক্টর নেই বললেই চলে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব কোন সেক্টরে পড়েছে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে তবে আপনি হয়তো চোখ বন্ধ করেই বলতে পারবেন শিক্ষাক্ষেত্রে। শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়া সকল প্রতিষ্ঠান বা সেক্টরই কমবেশি চালু আছে। যদিও বা দেশের অর্থব্যবস্থার সাময়িক সময়ে অনেক বেশিই ক্ষতি হয়েছিল তবে তা আজকে সচল বলা চলে। বিগত মার্চ মাসের ১৬ তারিখ থেকে শিক্ষাব্যবস্থ্যার বন্ধের কারণে নানা পরিবর্তন দেখলেও সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন চোখে পড়েছে প্রযুক্তিতে ও শিক্ষাব্যবস্থাতে। তবে আমার মনে হয় শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনটা হয়তো সাময়িক ভালো মনে হলেও এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব অনেকটা ভোগ করতে হবে আমাদেরকে। আজকে আমি করোনা পরবর্তীতে শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাব নিয়ে আলোচনাতে হয়তো যাবো না তবে করোনা সময়ে শিক্ষকদের ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কিছু চিত্র বা বিষয় তুলে ধরবো যা হয়তো আপনাকে পরবর্তীতে কি হতে পারে নিজেই আনুমানিক একটা ধারণা পাবেন। চেষ্টা করা হবে এই বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরার জন্য। 

আরো পড়ুন >> করোনা পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থা পাঠ-২

যুবকরা কেন সরকারী চাকরীতে এত বেশি আগ্রহী।

 

করোনার পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থা পাঠ - ১

মার্চ মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রভাব

শুরুতেই করোনার সময়ে শুরুর দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে কি সমস্যার তৈরি হয়েছে সেটা আলোচনা করবো। মার্চ মাসে আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মির্ডটার্ম পরীক্ষা হয়ে থাকে। বছরের ১ম পরীক্ষাটা নিতে দেরি হয় আমাদের দেশে। যদিও বই আমরা বছরের শুরুতেই পায় তারপরেও আমাদের দেশের অভিভাবকরা এতটা এখনও সচেতন নয়। বেশিভাগ অভিভাবক মনে করেন জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারীতে আমাদের দেশে কোন পড়াশোনা হয় না। আর তাদের এই পড়াশোনা হয় ধারণাটার কারণে অনেক সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাধ্য হয় ১ম সাময়িক পরীক্ষাটা একটু দেরিতে নিতে। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটা প্রতিষ্টানের সাথে যুক্ত থাকার কারণে এই আর্টিকেলটি লিখতে আমার সুবিধা হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান সেই সময়ে প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষার রুটিন দিয়েছিল আর বন্ধের কারণে সেটা আর নেওয়া সম্ভব হয় নাই। এমনকি আমার যুক্ত থাকা প্রতিষ্ঠানটা রুটিন দেওয়ার দিনটাতেই বন্ধের ঘোষনা আসে। তবে প্রথম দিকে ধারণা করা হয়েছিল পরের মাসে হয়তো খুলে দেবো সমস্যা হবে না পরেই নেওয়া যাবে। যেটা দফায় দফায় বাড়তে বাড়তে সেই পরীক্ষাটা আর নেওয়া সম্ভব হয় নাই। লক ডাউনের সময়টাতে আমাদের দেশের পরিবেশটা আসলে একটু খারাপই ছিল যার কারণে আমরা কোন স্থানেই নিরাপদে চলাফেরা করতে পরি নাই। 


পৃথিবীর সেরা শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে পড়ুন।

 

আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিকরা মনে করেছিল হয়তো দ্রুতই খুলে দেওয়া হবে বিধায় তারা এতটা চিন্তিত ছিল না এই বিষয়টা নিয়ে। আর এরকম পরিস্থিতিটা আগেও জানা ছিল না আমাদের দেশের মানুষের কাছে। প্রতিটা মানুষই ছিল ঘরবন্দী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়টাতে একটা পরিবেশ ছিল যেখানে চারদিকে অনেক যুদ্ধ ও ‍যুদ্ধের একটা পরিবেশ বিরাজ করতো যেটা এই করোনার সময়টাতে মনে হয় সেটা যদিও আমাদের নিজেদের কারণেই। বিভিন্ন টিভি মিডিয়াতে যদি সেই সময়ের চিত্রটা দেখা যায় তবে অনেক ভয়াবহ একটা পরিবেশ ছিল সেই সময়টার। বিশেষ করে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়টাতে মানুষ ঘর থেকেও বের হতে পারে নাই। আসলে এই পরিবেশটা আমাদের সবার কাছেই নতুন ছিল। দেশী-বিদেশী সকল যোগাযোগই বন্ধ ছিল। করোনার আগে যারা বাই থেকে দেশে বেড়াতে আসছিল তারাও যেতে পারে নাই। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার কারণে তাদের দেশে বিশেষ ফ্লাইট পাঠিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়াও আরও পরিবর্তন সেই সময়টাতে দেখা যায় যেটা বিগত বছরগুলোতে ছিল না। 

 

করোনার পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থা পাঠ.

১ম দিকে বন্ধ হওয়ার কারণে যেই প্রভাব ছিল সেটা আসলেও বর্ননা করার মত না। আর প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠাই পরিচালিত হয় ছাত্র-ছাত্রীদের বেতনের উপর ভিত্তি করে আর মার্চ থেকে বন্ধ হওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানের মালিকটা বিপদে পড়ে যায়। শহরে সবচেয়ে বেশি পড়াশোনা করে ছাত্র-ছাত্রীরা আ কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশিভাগই শহরের দিকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে শুধু যে প্রতিষ্ঠান ক্ষতি মুখে পড়েছে বিষয়টা তা নয় তবে বেশিচেয়ে বেশি বলা যেতে পারে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পড়াশোনা করতো যারা তারা দ্রুতই নিজেরেদ বাড়িতে চলে যায় আর যারা ভাড়া থাকতো তারা চলে যাওয়াতে শহরে মানুষের সংখ্যা কমতে থাকে আর গ্রামে বাড়তে থাকে। যাদের আত্মীয় বা পরিচিত যারা ছিল পড়াশোনা করতো তারা সবাই বাড়িতে যাওয়ার ফলে বাড়িগুলোতে চাপ বাড়ে। তৈরি হয় মানসিক সমস্যা সহ আরও অনেক রোগ। এ দিকে ছাত্র-ছাত্রীরা যেই সময়টা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কোচিং করে কাটাতো সেই সময়টা কাটানো কঠিন হয়ে পড়ে। লক ডাউনের কারণে মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গাতেও যেতে পারে না। যার ফলে ছোট বড় সকল বয়সের শিক্ষার্থীই একটা মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে যায়। তারা ধীরে ধীরে পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়তে থাকে। সরকারী বিভিন্ন পরিকল্পনাগুলো আসতে আসতে অনেকটা দেরি হয়ে যায় যার ফলে কোন কাজেরই সঠিক সমন্বয় হয় না। অনেক সময় দেখা গেছে যে, একটা সরকারী ব্যবস্থা আরেকটা ব্যবস্থার দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বলছে। সমস্যা বাড়তে থাকে সকল সেক্টরে। এদিকে বিদেশে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বাণিজ্যিক বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে কিন্ডারগার্টেন সকল শিক্ষকরাই ঘরবন্দী হয়ে পড়ে। 


পড়াশোনা মনে রাখার উপায়গুলো জানতে পড়ুন।

 

করোনার পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থা পাঠ..

প্রাইভেট বড় প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগে থেকে প্রযুক্তির সাথে কমবেশি যুক্ত। তারা খুব দ্রুতই এই পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারলেও প্রাইমারি ও মাধ্যমিক পর্যায়ে সমস্যাটা বেশি হয়। মার্চ মাসের বন্ধ হওয়ার কারণে ২০২০ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। মাধ্যমিক এস. এস. সি. পরীক্ষা কোন রকমের শেষ হলেও রেজাল্ট দেওয়া ও খাতা মূল্যায়ন নিয়ে পড়তে হয় অনেকটা সমস্যায়। সব মিলে সব সেক্টরে প্রভাব পড়লেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রভাবটা অনেক বেশি হয়ে যায় কারণ আমাদের দেশে শিক্ষার সাথে যুক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭০% এর বেশি। কারণ একটা পরিবারের কর্মজীবি ছাড়া সন্তান সবাই পড়াশোনার সাথে যুক্ত আর একজন শিক্ষার্থীর পড়াশোনা শেষ করতে করতে প্রায় ২৮ বছর লেগে যায় অনেকেই আছে আরও ডিগ্রি নেওয়ার জন্য পড়াশোনা করতে থাকে। প্রতিষ্ঠানের মালিকরা পড়ে যায় বিপাকে তারা প্রতিষ্ঠানের খরচ বহন করা সহ আরও বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়ে যায়। নিজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো মানে যেগুলো নিজের জায়গাতে সেগুলো সাময়িক চিন্তামুক্ত থাকলেও ভাড়ায় চালিত প্রতিষ্ঠানগুলো খুব দ্রুতই বিকল্প ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হতে থাকে। অনলাইন ক্লাস শুরু করে দেয় অনেক প্রতিষ্ঠান তবে মাত্র ২% হবে যেটা শহরের বড় বড় প্রতিষ্ঠানই এর সাথে যুক্ত হতে পেরেছিল। কারণ শিক্ষাব্যবস্থাটা আমাদের দেশের এতটা আধুনিক হয় নাই এখনও। আর মাধ্যমিক ও প্রাইমারিতে শিক্ষার্থী সংখ্যাটা অনেক বেশি অন্যন্যা প্রতিষ্ঠান যেমন উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইতে। 

 

প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়াতে যেসব সমস্যায় পড়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম কিছু সমস্যার মূল বিষয়গুলো নিয়ে সামান্য লিখবো আজকের আর্টিকেলটিতে। যেমন, 


(১) পড়াশোনা বিমুখ শিক্ষার্থীরা ।

(২) মেয়েদের বাল্যবিবাহ ।

(৩) ভাড়ায় চালিত প্রতিষ্ঠান বন্ধের দিকে চলে যায়। 

(৪) অভিভাবকের সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়া। 

(৫) প্রতিষ্ঠানের বেতন ও বকেয়া নিয়ে সমস্যা। 

(৬) মোবাইলের প্রতি আসক্তি বেড়ে যাওয়া। 

(৭) শিক্ষার সাতে জড়িতরাও ক্ষতির কবলে। 

(৮) পারিবারিক সমস্যা। 

(৯) শিশুদের মানসিক বিকাশে বাধ্যগ্রস্থ। 

(১০) সামাজিক সমস্যা বেড়ে যাওয়া। 

(১১) ইত্যাদি। 

 

উপরোক্ত পযেন্টগুলো শুধু আমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত যারা তাদেরটা বললাম তবে এছাড়াও আরও কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয় যেটা আপনারা হয়তো নিজেরাই। আমি মূল এই সমস্যাগুলো নিয়েই পরবর্তীতে আলোচনা করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। এই আর্টিকেলটি চলমান থাকবে এ নিয়ে আপনাদের মূল্যাবান কোন কথা থাকলে শেয়ার করতে পারেন কমেন্ট এর মাধ্যমে। অনেক ধন্যবাদ মূল্যবান সময় নিয়ে পড়ার জন্য। 


দেশীয় সেরা কম্পানির নাম ও চাকরী জানতে পড়ুন।


করোনা পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনীতি কেমন হবে।


ডিজিটাল মার্কেটিং এর কনটেন্ট মার্কেটিং জানতে আর্টিকেলটি পড়ুন।


সম্পদ কি মানসিক শান্তির অন্তরায় জানতে পড়ুন।

About ডিজিটাল আইটি সেবা

ডিজিটাল আইটি সেবা অনলাইন ভিত্তিক সেবা মূলক প্রতিষ্টান। এখানে অনলাইনে আয়, ডিজিটাল শিক্ষা, ফেইসবুক মার্কেটিং সহ আরও অনেক কাজের ধারণা প্রদান করা হয়। এটি দেশের আর্থিক সামাজিক অবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করে থাকে।

View all posts by ডিজিটাল আইটি সেবা →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *