বিদআত কি ? নামাযের শেষে মোনাজাত ধরা কি বিদআত ?

পাকিস্তান, বাংলাদেশ ভারত এই তিনটা দেশেই ইসলামের বিভিন্ন সুন্নাহ ও আকিদাহ নিয়ে নানা মত পার্থক্য তৈরি হয়েছে ইদানিং। আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন কিভাবে ? মোনাজাত করবেন কিভাবে ? আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাইবেন কিভাবে ? নামাযের ফজিলত কি ? বিদআত কি ? নামাযের পরে হাত তুলে মোনাজাত ধরা কি বিদআত ? এসব আরও অনেক প্রশ্ন আমাদের এই তিনটা দেশে। মাজহাব ও নানা রকমের সমস্যায় আক্রান্ত আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ।

বিদআত কি ? নামাযের শেষে মোনাজাত ধরা কি বিদআত ?


আমরা এসব প্রশ্নগুলো জানার আগে আমাদের উচিত ইসলামের মৌলিক কিছু বিধান জানা যা অত্যন্ত জরুরী আমাদের জন্য। একজন মুসলমান হিসেবে আপনাকে যা যা জানতে হবে তার মধ্যে অন্যতম বিষয়ে হলো ইসলামে ৫টি স্তম্ভ। হালাল হারাম কি ? আবার হালাল হারামের বিধান কি ? কোন কাজ হালাল আর কোন কাজ হারাম এসব বিষয়গুলো নিয়ে আমরা যতটা কথা বলি কিন্তু ইসলামে মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে এতটা কথা কখনই বলি না।

ইসলামের কিছু বিষয় আছে যেগুলো জানার জন্য আপনাকে অনেক বেশি চিন্তাশীল হতে হবে না। ইসলামের প্রতি মৌলিক জ্ঞান থাকলেই হবে। যেমন, নামায শুরু হবে তাকবির দিয়ে আর শেষ হবে সালাম দিয়ে। তারমানে নামাযের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভেতরের কাজগুলো ইবাদতের মধ্যেই পড়ে। এখন নামাযের শেষে আপনি বাড়তি কোন আমল করলে সেটা কিন্তু আর নামাযের মধ্যে পড়বে না। অর্থ্যৎ বিদআত এর বিষয়টা এখন চলে আসবে। আমরা অনেকেই জানি না বিদ’আত কাকে বলে ? আবার অনেকেই গুলিয়ে ফেলি বিষয়টা।

বিদ’আত হলো ইবাদতের মধ্যে নতুন কিছু তৈরি করা যা আগে ছিল না এখন আসছে। যেমন আপনি নামাযের মধ্যে যদি কোন কাজ করেন যেটা আগে ছিল না সেটাকে বলা হচ্ছে বিদ’আত। আর তাকবির ও সালামের মাধ্যমে যদি নামায শেষ হয়ে যায় তারপরে কোন কাজ বাড়তি করলে সেটা আর ইবাদত হবে না বলেই বোঝা যায়। এখন আসি সুন্নাত বা সুন্নাহ কাকে বলে ?

ইবাদতের মধ্যে কোন বাড়তি কাজ করাকে তো বিদআত বলে। তেমনি ইবদতের জন্য কোন কাজ করাকেই বলা হয় সুন্নাত। আমাদের মধ্যে এই বিষয়টা নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা আছে। ছোট ও সহজ বিষয়টা আমরা নিজেরাই একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবো। আমাদের মধ্যে যারা নামাযের পরে মোনাজাত করে তারা নামায শেষ হলেই করে সেটা আগেকার দিনে থাকুক আর নাই থাকুক সেটা কিন্তু ইবাদত নয়। সেটা যারা করছেন তারা বাড়তি ইবাদত হিসেবেই করার চেষ্টা করছেন। তারা এটাকে বাধ্যবাদকতা করছেন না। হ্যা এটা ঠিক যে মোনাজাতে জোরে জোরে আমিন বলাটা হয়তো অনেক আলেমরা নিশেধ করেন।

তবে হাত তুলে মোনাজাত সেটা ধীরে করাটাতে বিদআত নয়। অনেক আলেম বলেন জোরে আমিন বললে অনেকেই যারা নামাযের এক বা দুই রাকাত শেষে আসে তারা যদি পরে নামায পড়তে থাকে তবে মোনাজাতে জোরে আমিন বললে তাদের সমস্যার কথা বিবেচনা করে আমিনটা আস্তে বলা যেতে পারে। আর ৫ ওয়াক্ত নামায শেষে তো মোনাজাত ছোট করেই হয়ে থাকে। আবার আমাদের দেশে জুমআর নামাযে অনেক সময় দীর্ঘ মোনাজাত করা হয় কারণ এই সময়ে কারো নামায বাকি থাকে না যেহেতু খুতবা শোনার পরেই জুমআর নামায আদায় আর ২ রাকাত হয়।

আরো পড়ুন >> সরকারী চাকরীর জন্য কি দক্ষতা প্রয়োজন।

আরো পড়ুন >> জানুয়ারী ২০২১ এর সকল চাকরীর খবর জানার জন্য পড়ুন।

আমি উপরের আলোচনার একটা মূল বিষয় আবারও বলছি। ইবাদতের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করাকে বিদআত বলা হয়। আর ইবাদতের জন্য কোন কিছু করাটা কিন্তু বিদআত নয়। এখন আসি ইবাদতের জন্য মানে কি ? দেখুন আমরা অনেক আগের যারা মানে আপনার পাশের মসজিদটা একটা সময় সন দিয়ে তৈরি করা ছিল এখন সেটা টাইলস করা হয়েছে। এটা কিন্তু ইবাদত নয় এটা ইবাদত করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। আপনি পাথর বিভিন্ন ধরনের ভাবে করতে পারবেন। এটাকেই বলা হচ্ছে ইবাদতের জন্য এই কাজটা করা হচ্ছে।

এখন আসি ইবাদতের মধ্যে অর্থটা কি। যেমন ধরুন যিকির করা একটা ইবাদত। পবিত্র কোরআনে যিকির করার নিয়ম বলা আছে। চারটি শব্দ তা হলো সুবহানআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাহ, আল্লাহু আকবার এই চারটা শব্দকে যিকিরের মধ্যে ধরা হচ্ছে যা হাদিসে আছে। চারটি যিকিরের শব্দ আবার নিয়মও চারটি। যেমন, (ক) মনে মনে যিকির করতে হবে। (খ) ভীত হয়ে যিকির করতে হবে। (গ) উচ্চ আওয়াজ বাদ দিয়ে। (ঘ) কান্নাজড়িত কণ্ঠে।

আমাদের দেশের অনেক আলেমরাই মোনাজাত করার কথা বলেছেন। কারণ আল্লাহর কাছে হাত তুলে তাকে ডাকলে তিনি খুশি হন। আর কোন বান্দা হাত তুলে ডাকলে তাকে অনেক ছোট মনে হয় তাই হাত তুলে ডাকাটা বিদআত নয়। হ্যা এটা ঠিক যে, আমরা অনেকেই যদি পেছনে থেকে জোরে জোরে আমিন বলি তবে অনেকেই যারা নামায পায় নাই বা কম পেয়েছে তাদের নামাযের সমস্যা হবে। তাই সংক্ষিপ্ত করে আমিন মনে মনে বলে হাত তুলে মোনাজাত করা কোন বিদআত হবে না। তবে আপনি হাত তুলেই ডাকবেন বিষয়টা তেমন না। আপনি ইচ্ছে করলে মনে মনেও ডাকতে পারেন কারণ আল্লাহ আপনার কথা শুনবে। হাত তুলে কাউকে ডাকলে তাকে ছোট মনে হয় তাই আমাদের দেশে হাত তুলে মোনাজাত করার প্রচলনটা বেশি।

এই বিষয়টা বোঝাতে গিয়ে আমাদের দেশের মুফতিগন বলেছেন যে, আমাদের দেশে যারা চেয়ারে বসে নামায আদায় করে তাদের নামাযটা সাধারণত হয় না। অনেক আলেমগন এর বিরোধীতা করেছেন। অনেকেই প্রশ্ন করেন চেয়ারে নামাযের বিধান কি ? আসলে চেয়ারে নামাযের কোন বিধান বলার আগে বিষয়টা বোঝা উচিত ভালো করে। কারণ আপনি যখন চেয়ারে নামায আদায় করবেন তখন চেয়ারটা নামাযের কাতার থেকে একটু দুরে থাকে। আর নামাযে কাতার ঠিক করা অনেক জরুরী বা নিয়ম যা করতেই হবে। কারণ যার জন্য নামাযের কাতার বাকা হবে আল্লাহ তার অন্তরকে বাকা করে দেবেন। তাই নামাযের কাতার ঠিক করা উচিত। আর চেয়ারে নামায আদায় করলে নামাযের কাতার ঠিক হয় না।

এ নিয়ে আমি আর বলতে চাই না তবে হ্যা অসুস্থতার জন্য আলাদা মাসআলা আছে যেটা আপনি জেনে নিতে পারেন। বসেও নামায আদায় করা যায় যেটাকে নামাযের কাতার বাকা হওয়ার সম্ভবনা থাকে না। তাই অনেক আলেমগন চেয়ারে নামায আদায় করার চেয়ে বসে নামায আদায় করার পরামর্শ দেন। এতটা বেশি অসুস্থ কমই আছে যারা কিনা বসতে পারবে না অনেকেই আছে দুনিয়ার সব কাজ ঠিক করলেও নামায আদায় করার সময় চেয়ার ছাড়া আদায় করে না। নামায অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিধান।

হাদিসে আছে কোন ব্যাক্তি সাগরে ডুবন্ত অবস্থাতে যদি তার হিতাহিত জ্ঞান থাকে আর কোন কাঠ পায় তবে সে সেখানেও নামায আদায় করবে। তার জন্য পূর্ব-পশ্চিম নির্ধারনের কোন প্রয়োজন নেই। আবার প্রসব বেদনায় আক্রান্ত কোন মহিলার জন্যও নামাযের মাফ নেই যদি নামাযের ওয়াক্ত হয় আর বাচ্চা প্রসবে দেরি থাকে তবে তার জন্যও নামায আদায় করতে হবে। তাই নামাযকে শারীরিক ইবাদতের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ইবাদত হিসেবে ধরা হয়। ইসলামের কিছু ইবাদত আছে যেগুলো শুধু শরীর দিয়েই করতে হবে তার মধ্যে নামায অন্যতম। কিছু আছে অর্থ দিয়ে আদায় করতে হয় তার মধ্যে যাকাত অন্যতম। আর কিছু আছে শরীর ও অর্থ দুটোই লাগে যেটা হজ্জ। নামাযের বিধান অনেক কঠিন এবং অন্ধ ব্যাক্তির জন্যও নামায মাফ নেই। পাগল ও হিতাহিত জ্ঞান যার নেই সেগুলো ছাড়া সকল ব্যক্তির উপরই নামায ফরয করা হয়েছে।

আরেকটা বিষয় এখানে বলে রাখি। আমাদের দেশে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভ্রান্ত ছড়ানো ব্যক্তিগুলো সম্পর্কে আলেমগন হাদিসের আলোকে ব্যখ্যা করেছেন যে, তারা দুনিয়াতে অবৈধ সন্তান। আমরা অনেক সময় অবৈধ সন্তান বিষয়টা বুঝি না যা বাইরের দেশে এখন প্রচলিত। ইসলামে বিবাহ ছাড়া কোন সন্তান আসলে সেটাকেই বলা হচ্ছে অবৈধ সন্তান। যা বাইরের দেশে সন্তান হওয়ার পরে তারা বিয়ে করে এমন নিয়ম প্রচলিত যদিও তারা অন্য ধর্মের। তবে অন্য ধর্মের নিয়মগুলোই ইদানিং আমাদের দেশের মুসলমানরা অনুসরণ করার চেষ্টা করছে কিছু কিছু। সূরা কলমের ১০ থেকে ১৯ নং আয়াতে এমন অবৈধ সন্তানের ৯টা গুনের কথা বলেছে যার অন্যতম হলেও এরা আল্লাহর বিধানকে মানে না।

আমি উপরের আলোচনার মধ্যে বিদআত কাকে বলে এর সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আর যিকির কোনগুলো আর যিকির করা কি ধরনের ইবাদত এ নিযে সংক্ষিপ্ত করে বলেছি। আবার শেষে দিকে দুনিয়াতে অবৈধ সন্তান কারা আর তাদের গুন নিয়ে অল্প ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এবং নামায কত বড় ও কত দামী একটা শারীরিক ইবাদত সেটা বলার চেষ্টা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের সবারই ইসলামের ছোট ছোট বিষয়গুলো জাানর দিকে সামান্য হলেও উপকার করবে। আপনার কোন বিষয়ে প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করা হবে সঠিখ উত্তর দেওয়ার।

About ডিজিটাল আইটি সেবা

ডিজিটাল আইটি সেবা অনলাইন ভিত্তিক সেবা মূলক প্রতিষ্টান। এখানে অনলাইনে আয়, ডিজিটাল শিক্ষা, ফেইসবুক মার্কেটিং সহ আরও অনেক কাজের ধারণা প্রদান করা হয়। এটি দেশের আর্থিক সামাজিক অবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করে থাকে।

View all posts by ডিজিটাল আইটি সেবা →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *